দখিনে রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত

পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানীর নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরী করেছে। এই সেতু অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি বড় মাইলফলক। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া ২১ জেলার সাধারণ মানুষ ভোগান্তিবিহীন আর স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে। এসব অঞ্চলে উৎপাদিত চিংড়ি, কাঁচামাল, সবজিসহ অনন্য পণ্য সহজে পরিবহনযোগে পাঠাচ্ছে রাজধানীর বুকে। এতে কৃষক লাভবানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে। নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য তৈরী হওয়ায় কর্মসংস্থান বাড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পুরো রেল লাইন প্রস্তুত করে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়েছে। জানা গেছে, আগামী মাস থেকেই পদ্মা সেতুতে পুরোপুরিভাবে চালু হবে ট্রেন চলাচল। ফলে এই সেতুতে ট্রেন চলাচলের মধ্যে দিয়ে নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হবে। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করেছে। বলা হয়েছে, এ পথের বাকি অংশ আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে চালু করা হবে। ফলে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ জনপদে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে এক অনন্য যুগে প্রবেশ করবে। কিছুদিন আগে রেলওয়ের উন্নয়নে খাতে অগ্রগতির জন্য যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। যা রেলপথের সার্বিক অগ্রগতিতে আরো সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে খুলনা থেকে ঢাকায় ট্রেন লাইনের দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। কিন্তু পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে নতুন রেলপথ সংযুক্ত হলে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। আর ঢাকা-যশোরের দূরত্ব কমবে ১৮৪ কিলোমিটার। ফলে একদিকে যেমন যাত্রীদের সময় বাঁচবে অন্যদিকে জ্বালানিও সাশ্রয়ী হবে রেলওয়ের। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত এই রেলপথে ২০টি রেলস্টেশন থাকবে। এর মধ্যে আগামী মাসে প্রাথমিক দফায় চালু হতে যাওয়া ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ রেললাইনে তিনটি স্টেশন চালু হবে; যার কাজও শেষ পর্যায়ে। দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর সড়ক পথ চালু হওয়ার মধ্যে দিয়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পেয়েছে তার ওপর যাত্রবাহী ট্রেন লাইন চালুর পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক (মালবাহী) ট্রেন চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প খরচে কৃষকরা ঢাকায় তুলতে পারবে। যা এ অঞ্চলের সার্বিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পটি ‘পদ্মা রেল সংযোগ’ প্রকল্প নামে পরিচিত। এ প্রকল্পের আওতায় ১০০টি আধুনিক ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ কেনা হয়েছে। যাতে রেলপথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি যাত্রীরা ভোগান্তিবিহীন দ্রুত সময়ে যাতায়াত করতে পারে। তবে প্রতিবছর রেল খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। নতুন নতুন পথ তৈরী হচ্ছে; সংযুক্ত হচ্ছে আধুনিক বিলাসবহুল কোচ। কিন্তু ভোগান্তি আর যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবার মান বাড়ছে না। আয়ের থেকে ব্যয় ক্রমাগতহারে বাড়লেও বছরের পর বছর রেল লোকসান দিয়ে চলছে। রেল মন্ত্রণালয় কিংবা রেল কতৃপক্ষ যাত্রী আর মালের ভাড়া কম থাকায় লোকসান হচ্ছে বলে এড়িয়ে গেলেও এর পিছনে রয়েছে কতৃপক্ষের উদাসীনতা, অসৎ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি আর রেল পুলিশের অবৈধ কার্যক্রম। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে এসব বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নতুন এই প্রকল্পে যাতে দুর্নীতি না হয় এবং লাভবান হওয়া যায় তার জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে বর্তমানের এ অবস্থা থেকে কোনভাবেই রেল খাতে উন্নতি সম্ভব নয়। পাশাপাশি পদ্মা রেল সংযোগ এই প্রকল্পে যাত্রীবাহী ট্রেনের সাথে বাণিজ্যিক ট্রেন চালু করার দিকেও কতৃপক্ষ সুনজর দিবে এমনটাই প্রত্যাশা রইল।
লেখক: রিয়াদ হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক, খুলনার সময়

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

আমাদের ফেসবুক পেজ

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার ,রাত ৩:৫৮
  • ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন