খুলনার সময়: পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরুর হওয়ায় সমৃদ্ধ হবে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। পণ্য আনা–নেওয়া সহজ হওয়ায় প্রসার হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানার। যা অবদান রাখবে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তবে টেকসই সুফল পেতে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য আলাদা পরিকল্পনার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
গত বছরের জুনে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু দেশের অর্থনীতির বাঁক বদলে নতুন সূচনা করে। কৃষি, শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার অর্থনীতিতে যোগ করেছে অনন্য মাত্রা। এবার রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় সম্ভাবনা বাড়ছে আরও বেশি। মঙ্গলবার পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। প্রথমভাগে চালু হচ্ছে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে। রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত এই রেলপথকে ঘিরে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ শতাংশ পর্যন্ত।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘রেল ব্যবস্থার সাথে আমাদের ব্যবসায়ী মহল বা আমাদের কৃষক, এটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ছিল। তাদের কিন্তু আবার রেলে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা প্রচেষ্টা নিচ্ছি। হয়ত, সময় লাগতে পারে।’
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘রেল ও নদীতে সব সময়েই পণ্য স্বল্প মূল্যে পরিবহণ করা যায়। তাদের (দক্ষিণাঞ্চল) যে পণ্যগুলো আছে, সেখানে শিল্প করলে, এগুলোকে বাজারজাত করা বা পোর্টে যাওয়ার জন্য দে নিড প্যাসেজেস। তাদের জন্য স্বল্প মূল্যে আমার মনে হয় এটা পরিবহনে আরও সুবিধা হবে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এরই মধ্যে একটি অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে উঠেছে। এ সেতু থেকে যে টোল আদায় হবে, তার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে আঞ্চলিক বিনিয়োগ। তাই নজর দিতে হবে পুরো অঞ্চলের পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর।
অর্থনীতিবিদ ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে সহজ হয়েছে চলাফেরা। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের একটা সুবিধা। যারা হয়তো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তাদের ক্ষেত্রে মূল ধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখব অভিবাসন বাড়বে। তারা আসতে পারবে কাজের জন্য, সুযোগটা তৈরি হবে।’
সেতুতে ট্রেন চালুর মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তদেশীয় রেলযোগাযোগে গতি আনবে। মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের সঙ্গে যুক্ত হবে পদ্মা সেতুর এ রেল প্রকল্প।
পদ্মা সেতুতে পাথরহীন রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল শেষ হয়।
এর আগে, গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু রেলসংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেলসংযোগ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।