প্রতারণার ফাঁদ পেতে অভিনব কৌশল ডিলারশীপ ও চাকরির প্রলোভন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন ফিড কোম্পানীর নামে প্রতারক চক্র। জানা গিয়েছে, ঢাকার সাভারের ডিওএইচএস এলাকার মধ্যে একাধিক নামে নতুন নতুন ফিড কোম্পানীর নামমাত্র অফিস খুলে সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিডি জবসের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে জাঁকজমকপূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন দোকানদারদের কাছে ডিলারশিপ ও ডিপো নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করছে। এছাড়া বেকার যুবকদের চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বেকার যুবকদের নামমাত্র নিয়োগ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মার্কেটিং বিভাগে নামিয়ে সাধারণ দোকানদারদের কাছ থেকে ডিলারশীপের নাম করে অগ্রীম টাকা নিয়ে প্রোডাক্ট না দিয়ে ছলচাতুরি করে থাকে। এতে করে মার্কেটিংয়ে চাকুরিরত যুবক বেকারদের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে, ফলে তারাও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঐসব ভুয়া কোম্পানীতে চাকুরিরত যুবকরা কয়েকমাস দিন-রাত পরিশ্রম করেও বেতন পায়না বলে অভিযোগ করেছে একাধিক ভুক্তোভোগী।
ঢাকার সাভারের ডিওএইচএস এলাকার কাজী দেলাওয়ার হোসেনের মালিকানাধীন ফিউচার ফিড বাংলাদেশ, পিউর পুষ্টি ও একই এলাকার রুবেল হোসেনের মালিকানাধীন বিএনসি ফিড, সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন পলিভিটা নামক প্রমুখ ভুয়া কোম্পানীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এসব প্রতারক চক্র কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে একই কৌশল ব্যবহার করে ডিলারশিপ ও কর্মী নিয়োগের নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে। যার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা সদরের খানপুর এলাকার ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ফেসবুকে ও পত্রিকায় বিএনসি ফিড নামক কোম্পানী ডিলার নিয়োগের তথ্য দেখতে পান। পরে তিনি বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা মোবাইল নাম্বারে ফোন করে কোম্পানীর ডিলারশিপ নিয়ে কথা বলেন। চক্রটি তাকে তাদের সাভারের অফিসে নিয়ে গরু,হাঁস-মুরগী,মাছের বিভিন্ন খাদ্যের ভুয়া পণ্য দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করায়। অতঃপর তার থেকে ফিড দেওয়ার নাম করে নগদ ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া তার কাছ থেকে একটি বিলং চেক নিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল। এতে তিনি হতাশাগ্রস্থ এবং নিঃস্ব পড়েছেন। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, ফিউচার ফিড ও পিউর পুষ্টি নামক কোম্পানী ডিলারশীপের নাম করে তার কাছে থেকে নগদ ২ লক্ষ নেয়, পরে কোনো ফিড পায়নি। সাতক্ষীরা শহরের রুহুল আমিনের কাছে থেকে ৫৭ হাজার টাকা প্রতারণা করেছে ফিউচার ফিড ও পিউর পুষ্টি নামক প্রতারক চক্রটি।
যশোর জেলার বাগআঁচড়া উপজেলা বাঁকা বাজারের ভুক্তোভোগী ব্যবসায়ী মাষ্টার মশিয়ার রহমান জানান, ডিলারশীপের কথা বলে তার কাছ থেকে নগদ ১ লাখ টাকা নিয়েছে ফিউচার ফিড ও পিউর পুষ্টি নামক ভুয়া কোম্পানীর লোকজন। সাভারের এক রেস্টুরেন্ট ও তাদের অফিসে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে লাঞ্চ পার্টি করে দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মন ভুলিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। একইভাবে, ফিউচার ফিড ও পিউর পুষ্টি নামক ভুয়া ফিড কোম্পানীর কাছে ডিলার নেওয়ার শর্তে বাগেরহাট সদরের মোস্তফা কামাল (তুহিন) ২ লাখ টাকা ও বরিশাল সদরের ব্যবসায়ী মোঃ নয়ন ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর,দিনাজপুর, রাজশাহীর একাধিক ব্যবসায়ী ও কৃষক এইসব ভুয়া ফিড কোম্পানীর প্রতারক চক্রের দ্বারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফিউচার ফিড নামক ভুয়া কোম্পানীর আশাশুনি অঞ্চলের সাবেক মার্কেটিং অফিসার মোঃ সালাহউদ্দিন জানান, তিনি বিডি জবসে নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেখে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে চাকরি পান। কিন্তু ৩ মাস চাকরি করার পরেও বেতন পাননি। তার মাধ্যমে আশাশুনি এলাকার অনেক ব্যবসায়ী ডিলারশীপ নেওয়ার জন্য অগ্রীম টাকা প্রেরণ করে। তবে পরবর্তীতে ফিড না আসায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা তাকে চাপ সৃষ্টি করে। এখন তিনি তার সম্পত্তি বিক্রয় করে ব্যবসায়ীদের কিছু কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন। এখন অর্থকষ্টে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি এই বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়াও ফিউচার ফিড কোম্পানীর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিংয়ে চাকরি করে আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাতক্ষীরা সদরের মার্কেটিং অফিসার রুহুল আমিন ও মোঃ আব্দুল্লাহ, কলারোয়া উপজেলা মার্কেটিং অফিসার মিন্টু সহ সারাদেশের একাধিক ব্যক্তিবর্গ।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এইসব ভুয়া ফিড কোম্পানীর প্রতারক চক্রের প্রধান টার্গেট দেশের উপকুলীয় অঞ্চল খুলনা ও বরিশাল বিভাগ। কারণ এই অঞ্চলে অধিক পরিমাণ মৎস্য খামার,মৎস্য ঘের, পশুর খামার রয়েছে। সুতরাং এই অঞ্চলে ফিডের চাহিদা ব্যাপক পরিমাণে থাকে। প্রতারক চক্ররা এই অঞ্চলের সাধারণ ব্যবসায়ী, কৃষক ও বেকার যুবকদের প্রধান টার্গেট করেছে। অনুসন্ধানে আরও জানা গিয়েছে, এইসব ভুয়া ফিড কোম্পানীর কোনো নিজস্ব ফ্যাক্টরি নেই। একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করে সাঁজিয়ে নামমাত্র অফিস খুলে বসেছে। এ বিষয়ে ভুয়া কোম্পানী ফিউচার ফিড ও পুষ্টি পিউরের মালিক কাজী দেলাওয়ার হোসেন ও বিএনসি ফিডের মালিক রুবেল হোসেন, পলিভিটার মালিক সাইফুল ইসলামের অফিসে যেয়ে এবং ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
©খুলনার সময় ২০২৩ | এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা, ছবি, ভিডিও সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত