প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার সফর সঙ্গীদের মৃত্যুতে ইরানে পাঁচ দিনের শোক চলছে। এ সময় কিছু বাধ্যবাধকতার কবলে পড়েছেন ইরানিরা। যা সরকারি ও ব্যক্তিগত জীবনের অনেক দিককে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে। বুধবার (২২ মে) আলজাজিরা ও ইরান ওয়্যারের প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসাধারণের শোক পালনে অনেকটা বাধ্য করছে সরকার। প্রথম দিন থেকে সরকার পরিচালিত সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কিছু রেডিও অনুষ্ঠানের পরিবর্তন করা হয়। তবে এবার আরোপিত শোক পালনের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। ফলে অনেক অঞ্চলে জোরপূর্বক ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান বাতিলসহ অনেক ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সংস্কৃতি ও ইসলামিক নির্দেশনা মন্ত্রণালয় সাত দিনের জন্য সিনেমা হল, কনসার্টসহ দেশব্যাপী সব সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পর্যটন ও হস্তশিল্প মন্ত্রণালয় সপ্তাহের সব ইভেন্ট এবং জাদুঘর বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সব ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন স্থগিত করেছে। শোকের এই সময়ে জনসাধারণের ওপর আরোপিত নতুন কঠোরতা হচ্ছে- বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের কমিউনিটি সেন্টারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা। এতে ইরানের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকে এটিকে নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করছেন। বলা হচ্ছে, এর ফলে অনেক পরিকল্পিত আয়োজন ব্যাহত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ব্যবহারকারী বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতা এবং হতাশা শেয়ার করেছেন।
অনেকে লেখেন, সোমবার ভেন্যুর মালিকদের প্রশাসনের কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, হলগুলোতে বিয়ের আয়োজন করা যাবে। কিন্তু নাচ-গান করা যাবে না। কিন্তু তবু প্রশাসনের কর্মকর্তারা হয়রানি করছেন। একজন ব্যবহারকারী লেখেন, কর্মকর্তারা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় হলে প্রবেশ করেছিলেন এবং হুমকি দিয়েছিলেন যে, কোনো নাচ-গান করলে বর-কনের বাবাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এতে অনেক কমিউনিটি সেন্টারের মালিক ভয়ে পূর্বনির্ধারিত বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন বর-কনের পরিবার।
এদিকে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির জানাজা বুধবার (২২ মে) রাজধানীর তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। ইরানের সংবাদমাধ্যম ইরনার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাইসি ও তার সফরসঙ্গীদের জানাজায় হাজারো মানুষ কালো পোশাক পরে অংশ নিয়েছেন। জানাজা শেষে তার কফিন ছুয়ে শোক প্রকাশ করেছেন অসংখ্য মানুষ। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জানাজা শেষে কফিন নিয়ে আজাদি চত্বরে শোকযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন।
গত সোমবার দুর্ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মেলে। এরপর দেশটির বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমতি কেউই আর বেঁচে নেই। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাইসিকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
©খুলনার সময় ২০২৩ | এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা, ছবি, ভিডিও সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত