খুলনার সময়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন চাইলে নৌকা, ধ্বংস চাইলে বিএনপি জামায়াত। আমার কথা পরিষ্কার। জনগণ ভোট দিলে আসবো, না দিলে নাই। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার কাওলা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকাই একমাত্র মার্কা যেটি স্বাধীনতা, উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, পানি, যোগাযোগ সবই দিয়েছে। এ মার্কা ক্ষমতায় থাকলে সবই হবে। লুটেরারা ক্ষমতায় আসলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এ দেশকে যেন ধ্বংস করতে না পারে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। খুব স্বাভাবিক। তারা যে নির্বাচন করবে, তাদের প্রধানমন্ত্রী হবে কে? এজন্য তাদের চেষ্টা নির্বাচন বানচাল করার। তারা জানে, নির্বাচন হলেই আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। তাই তারা নির্বাচন ঠেকাতে চায়। এজন্য আপনারা সচেতন থাকবেন। যেভাবেই হোক নির্বাচন হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন চাইলে নৌকা, ধ্বংস চাইলে বিএনপি-জামায়াত। আমার কথা পরিষ্কার। জনগণ ভোট দিলে আসবো, না দিলে নাই। আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, এটার জন্য ওয়াদা দেন। দেবেন সবাই নৌকায় ভোট? সবাই ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন। পরে তিনি বলেন, খালি নৌকায় ভোট দিলেই হবে না। দেশ বিদেশে প্রচার করতে হবে। সবাইকে বলতে হবে নৌকায় ভোট দিতে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ ঢাকা বদলে গেছে। যানজট দূর করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। এরইমধ্যে মেট্রোরেল করেছি। যোগাযোগের জন্য মেট্রোরেলের সঙ্গে পাতাল রেল করছি। ঢাকায় সার্কুলার ওয়াটার ওয়েজ নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই পুরো ঢাকা ঘিরে সার্কুলার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে দেবো। পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে অপচয় রোধের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি অনুরোধ করবো বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। ঘর থেকে বের হলে ফ্যান ও লাইটের সুইচ অফ করবেন। পানিরও অপচয় রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির আমলে দেশ ছিল পিছিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে এগিয়ে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খালেদা জিয়ার আমলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আর আমরা এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সেটা ধারণ করে এবং জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আপনাদের এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আজ দেশের মানুষ ভূমি ও গৃহ পাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বস্তিবাসীদেরও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট দিচ্ছি। তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। খালি বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, গরিবরা থাকবে না, এটা হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তার (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে অনশন করে। তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছে? বাসা থেকে কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে, কী দিয়ে গিয়ে খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করার-তো একটা সীমা থাকে। তারা অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চায়, নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না, সে? এ আশা দুরাশা। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতই অসুস্থ। তিনি নাকি মারা যাবেন! হ্যাঁ বয়স হয়েছে, আবার অসুস্থ। কিন্তু এত অসুস্থ হলে তার ছেলে তাকে দেখতে আসে না কেন? এটা কেমন ছেলে? জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা আর স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় বসানোর কাজ করেছে। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। এদের জন্ম হয়েছে হত্যার মধ্য দিয়ে। ষড়যন্ত্র করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার বাবার সঙ্গে দায়িত্বরত অফিসারদেরও হত্যা করেছে। জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। অবৈধ দখলদারদের দোসর বিএনপি-জামায়াত আজ বাংলোদেশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এদেশের মানুষের ভোটার অধিকার নিশ্চিত করেছি। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করেছি। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন আপনাদের কাছে অনুরোধ, প্রত্যেকের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে, সবাই উৎপাদন করেন। বিশ্বব্যাপী খাদ্য মন্দা, বাংলাদেশে যেন খাদ্যের অভাব না হয়। আর অনেকে, অনেক সময় আমি দেখি কোনো জিনিসের তারা হোল্ডিং করেন, মজুদ করেন। এই মজুতদারি কালোবাজারি যারা তাদের খুঁজে বের করতে হবে। কে কোথায় কি মজুত রেখে পেঁয়াজ পচাবে, ডিম পচাবে আর মানুষকে বেশি দামে কিনতে হবে এটা চলবে না। ওই হোল্ডিং যারা করেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব। যথাযথ সাজার ব্যবস্থা করা হবে যাতে মানুষের কোনো কষ্ট না হয়। রিজার্ভ গেল কোথায়? অনেকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। ভ্যাকসিন কিনছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি, এখনো কিনছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনায় ধনি দেশ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে, আমরা দিয়েছি বিনামূল্যে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, করেছি। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এর আগে বেলা সোয়া তিনটার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীতে ক্ষমতাসীনদের জনসমাবেশে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানান। হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
©খুলনার সময় ২০২৩ | এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা, ছবি, ভিডিও সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত