স্বার্থে আঘাত লাগলে মানুষ সহজেই বদলে যায়। এক সময় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ভলোদিমির জেলেনস্কির খুব মাখামাখি ছিল। কিন্তু স্বার্থের টান পড়ায় নেতানিয়াহু প্রশাসনকে ধমকের সুরে কথা বলছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনে রুশ হামলার পর ইসরায়েলের সমর্থন পেয়েছিল কিয়েভ। আবার গেল অক্টোবরে গাজায় অভিযান শুরুর পর ইসরায়েলের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে ইউক্রেন। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই জেলেনস্কিই এখন গাজার জন্য ‘মায়া কান্না’ করছেন। জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার হাতে মার খাচ্ছে ইউক্রেন। দেশটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকায় পশ্চিমা বিশ্ব। তাই জেলেনস্কি দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেনের জন্য শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরব সেই সম্মেলন বয়কট করায় দিশেহারা জেলেনস্কি এবার সুর বদলালেন।
দ্য নিউ আরব এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে শাংগ্রি লা ডায়ালগ কনফারেন্সে জেলেনস্কি গাজা ইস্যুতে নিজের নতুন অবস্থান তুলে ধরেছেন। শুরুতে ইসরায়েলের সমর্থক থাকলেও এখন এই ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলছেন, গাজায় সহায়তায় দিতে প্রস্তুত আছে কিয়েভ। আর ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত। সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে ইসরায়েলকে বোঝানো এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষেও নিজের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন জেলেনস্কি। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ইসরায়েলকে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন জেলেনস্কি। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা নেতানিয়াহু সেই কথা কর্ণপাত করছেন না। তিনি দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তাই জেলেনস্কি এমন কড়া সুরে কথা বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডে চলতি মাসের মাঝামাঝি ইউক্রেনকে নিয়ে একটি শান্তি সম্মেলন হওয়ার কথা। কিন্তু সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা ওই সম্মেলনে যোগ দেবে না। রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, সুইস সরকার ১৬০ দেশের প্রতিনিধিকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় রাশিয়ার নাম নেই। আর তাই নাকি রিয়াদও ওই সম্মেলনকে বয়কট করেছে। কয়েক দিন আগে চীন জানায়, তারা ওই সম্মেলনে যোগ দেবে না। জানা গেছে, এ মাসের প্রথমার্ধে সৌদি আরব সফর করার কথা ছিল জেলেনস্কি। উদ্দেশ্য ছিল রিয়াদের সমর্থন চাইবেন তিনি। কিন্তু সেই সফর বাতিল হয়ে গেছে। যদিও এমন সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছে দ্য নিউ আরব। ইউক্রেন ও রাশিয়া- উভয় দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রয়েছে সৌদি আরবের। এর আগেও ইউক্রেন যুদ্ধে সমঝোতায় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে সৌদি আরবকে। তাই সৌদি আরব হঠাৎ ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে অথৈ সাগরে পড়বেন জেলেনস্কি।