ইসরায়েলের পক্ষে রায় দিলে দেওয়া হবে অঢেল অর্থকড়ি, আর না দিলে নিরাপদে থাকবে না পরিবার। অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত- আইসিসির সাবেক প্রধান কৌঁসুলিকে এমন হুমকি দেয় ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইসরায়েল। একাধিকবার এ হুমকি দেন দেশটির দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন। অনুসন্ধানমূলক এক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়—ইসরায়েল গাজায় যে যুদ্ধাপরাধ করছে, তার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইসিসির সাবেক প্রধান কৌঁসুলি ফাতাউ বেনসুদা। এ নিয়ে কয়েক বছর তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন। এ বিষয়ে ২০২১ সালে শুরু হওয়া অনুসন্ধান চলতি মাসে শেষ হয়। যেখানে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানিয়েছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি। একেই দীর্ঘদিন ধরে ভয় করে আসছিল তেল আবিব। গার্ডিয়ান জানায়, ইয়োসি কোহেন মোসাদের পরিচালক থাকাকালে আইসিসির কৌঁসুলিদের বিরুদ্ধে কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছিলেন। দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার তথ্য মতে, দেশের উচ্চপর্যায় থেকে তার এসব কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে অবগত আরেকটি ইসরায়েলি সূত্র গার্ডিয়ানকে জানায়, মোসাদের লক্ষ্য ছিল ফাতাউ বেনসুদার সঙ্গে সমঝোতা করা। যেন তিনি তেল আবিবের হয়ে কাজ করেন। এ জন্য নেতানিয়াহুর ‘অনানুষ্ঠানিক বার্তাবাহক’ হিসেবে ভূমিকা রাখছিলেন কোহেন। গার্ডিয়ান জানায়, ৪টি সূত্র নিশ্চিত করে, কোহেনের ক্রমাগত হুমকি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও বেনসুদা আইসিসির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে কোহেনের বিরুদ্ধে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলেন। আইসিসির কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া ভাষ্য অনুযায়ী, কোহেন তাকে বলেছেন, ‘আপনার আমাদের সাহায্য করা উচিত এবং আমাদেরও আপনাকে সেবা করতে দিন। আপনি এমন কোনো কিছুর মধ্যে জড়াবেন না, যাতে আপনার বা আপনার পরিবারের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা লাগতে পারে।’
পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান রাখেন, এমন দুটি সূত্র বলেছে, মোসাদ বেনসুদার পরিবারের সদস্যদের প্রতিও নজর রেখেছিল এবং তার স্বামীর গোপন কথাবার্তার প্রতিলিপি বা রেকর্ড সংগ্রহ করেছিল। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা পরে ওই রেকর্ড নিয়ে বেনসুদাকে হেনস্থারও চেষ্টা চালিয়েছিল। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের কাছে পাঠানো প্রশ্নগুলোতে অনেক মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বিষয় রয়েছে, যা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে আঘাত করার জন্য করা হয়েছে।’ কোহেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বেনসুদার পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।