এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র ছিল জাতীয় পার্টি। তারা নির্বাচনে আসবে, আসবে না এ নিয়ে নানারকম কানাঘুষা আলাপ আলোচনা ছিল। এমনকি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন কয়েক ঘণ্টায় ঢাকা শহরে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল যে জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আছে এবং এখন পর্যন্ত কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলছে। কিন্তু প্রশ্ন হল যে জাতীয় পার্টির নির্বাচন প্রচারণা, থাকা না থাকা ইত্যাদি নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে। জাতীয় পার্টি যেন এক রহস্যময়ী মায়াবী নারীর মতো ভূমিকা রাখছে নির্বাচনে। যেমন, ধরা যাক জাতীয় পার্টি দলগতভাবে সর্বোচ্চ একক প্রার্থী দিয়েছে। আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু ১০০ টির বেশি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের কোন রকম কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় না।
যে ১০০টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রতিযোগিতা করছেন সেই আসনগুলোর অধিকাংশই উত্তরাঞ্চল এবং সিলেট অঞ্চলের। বাকি যে সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টি তাদের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন, সেখানে তাদের প্রচারণা খুব একটা চোখে পড়ে না। তাহলে তারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন কী কারণে- এই প্রশ্নটি এখন উঠেছে। যে ২৬ টি আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে, তাদের প্রার্থীদের জয়ের সুবিধার্থে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে, সেই সমস্ত আসনগুলোতেও জাতীয় পার্টি যে খুব শক্তপোক্ত অবস্থায় আছে এমনটি নয়। বরং এই ২৬ টি আসনের মধ্যে ১০ টি আসনে জাতীয় পার্টিকে সপ্রতিভ দেখা যাচ্ছে। বাকি আসনগুলোতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কতটা উজ্জ্বল নয়। ওই সমস্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ভোটারদের মধ্যেও উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক কম বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
যদি জাতীয় পার্টি এককভাবে যে সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় অংশগ্রহণ করছে তার মধ্যে ৫ থেকে ৬ টি নির্বাচনী এলাকায় শক্তিশালী অবস্থানে আছে। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলের দুটি আসনে এবং রংপুরের কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টির অবস্থান ভাল। কিন্তু জাতীয় পার্টি নির্বাচনের পরে কী করবে-এ নিয়ে নানান রকম রহস্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে জাপার চেয়ারম্যানের ভূমিকা অত্যন্ত রহস্যময়। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন বেশ কয়েকদিন পর। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে যতটুকু সক্রিয় এবং সপ্রতিভ তাকে দেখার কথা তেমন দেখা যায়নি।
জাতীয় পার্টির বিভিন্ন প্রার্থীদের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেননি। জিএম কাদেরকে তেমন ভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের ফলাফলের পরে জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা নেয় সেটি এখন একটি বড় রহস্য হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কারণ জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা নিয়ে এক ধরনের অসন্তোষ ছিল। সেই অসন্তোষ নিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে যেতে ‘বাধ্য হয়েছে’ বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল যদি তারা তাদের অনুকূলে না পায় তাহলে তারা নির্বাচনের পরে অন্য রকম ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় পার্টি এখনও রহস্য দোলাচলে আলো আঁধারির মধ্যে নিজের অবয়ব অস্পষ্ট করে রেখেছে। তারা আসলে এই নির্বাচনকে কীভাবে স্বীকৃতি দেবে তার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এর অনেকখানি।
©খুলনার সময় ২০২৩ | এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা, ছবি, ভিডিও সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত