সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর ভোমরা নিয়ে অপ্রচারের অভিযোগ

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দেশের দক্ষিণ -পশ্চিম অঞ্চলের একটি সম্ভাবনাময় বন্দর। ভারতের কোলকাতা বন্দর থেকে ভোমরা স্থল বন্দরের দূরত্ব অপেক্ষাকৃত কম হয় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। ফলে প্রতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে এই বন্দর থেকে।

সার্বিকদিক বিবেচনায় রেখে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গুঁড়া দুধ ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই স্টেশনকে কাস্টমস হাউস ঘোষণার আগেই এই যুগান্তকারী ঘোষণা দেয় এনবিআর। ফলে দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়ের দ্বার উন্মোচন হয়েছে এই বন্দরে।

এদিকে ভোমরা বন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহাল ভোমরা বন্দরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তারা ভোমরা স্থলবন্দরের চলমান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে ।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা কাস্টমস থেকে কলকাতার দূরত্ব বেনাপোল বন্দর থেকে ৩৫ কিলোমিটার কম থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। দূরত্ব কম,পণ্য পরিবহনে খরচ সাশ্রয় ও সময় বাঁচার কারণে ব্যবসায়ীরা অতি কম সময়ের মধ্যে ভোমরা বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে আমদানিকৃত সকল ধরনের পচনশীল দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সময় কম লাগায় ব্যবসায়ীরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে ভোমরা বন্দরে। যে কারণে পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের দিকে ঝুকছেন। এখানে বেনাপোল বন্দরের মত ফলের ট্রাক থেকে শুরু করে সকল ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ডিজিটাল স্কেলে নিখুঁত ভাবে পরিমাপ করে রাজস্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে।

ভোমরা বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের একটি কুচক্রীমহল সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দপ্তর ও গণমাধ্যমে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ প্রচার করে ভোমরা বন্দর ও বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

ভোমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষে সূত্র জানায়, বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দরের জমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। অচিরেই, কাস্টম হাউজ, শেড, ইয়ার্ড, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ সকল ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম পুরোদমে ব্যবসায়ীরা শুরু করলে এই বন্দর থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবি ও অন্যতম সদস্য মাকসুদ খান বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাগ্য খুলেছে। কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই বন্দরের প্রতি আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঝুঁকছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ভিতর একটি কুচক্রীমহল এই বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যে অচল অবস্থা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

তারা বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরে এনালগ স্কেলে পণ্যবাহী ফলের ট্রাকের ওজন পরিমাপের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির কথা বলে ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। যেখানে জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, জাতীয় গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা সংস্থা ডিজিএফআই ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল স্কেলে সকল ধরনের পণ্য পরিমাপ করা হয়। কোন আমদানিকারকের ওজন ফাঁকির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

তারা আরও জানান, ভোমরা সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভোমরা স্থল বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক প্রকাশিত নিউজের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এছাড়া কাস্টমস হাউজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা সব ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম শুরু করলে এই বন্দরে রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

ভোমরার স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা (পরীক্ষণ) বাবলুর রহমান জানান, এ বন্দরে ফলের ট্রাকের ওজনসহ সকল পণ্য পরিবহনের ওজন জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সকলের উপস্থিতিতে ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এখানে এনালগ পদ্ধতিতে কোনো ওজন পরিমাপের সুযোগ নেই। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরের ওজন ফাঁকির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ভারত থেকে পিটি-১৩২০১১ নম্বরের যে ট্রাকে করে ভোমরা বন্দরে আপেল প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। আদৌও এই নম্বরের কোনো ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেনি। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মোঃ রুহুল আমিন (ট্রাফিক) জানান, প্রায় ১১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে স্যান্ড ফিলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সেখানে উন্নতমানের ওয়ারহাউজ,শেড, ইয়ার্ড, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এগুলো সম্পন্ন করা হলে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবস্থা বাণিজ্যে আরোগতি আসবে। বছরের কয়েক হাজার কোটি টাকা সরকারের আরও বেশি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

ভোমরা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মতলেবুর রহমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে কাস্টমস প্রশাসন। কোন অনিয়ম দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকায় তৈরি হয়েছে ব্যবসাবান্ধব অনুকূল পরিবেশ। বিগত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে ২৭৫.৮৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। আগামীতে সকলের সহযোগিতায় চলতি অর্থ বছরে তুলনায় আরো বেশি রাজস্ব আদায় হবে দাবি করেন তিনি।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

খুলনার সময়

একটি সৃজনশীল সংবাদপত্র

আমাদের ফেসবুক পেজ

আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার ,বিকাল ৫:০১
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ২০ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন