খুলনার সময়: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি দূর করে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছিল গেল বছরের ২৫ জুন। পরের দিন গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতু। আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পদ্মা রেল সংযোগ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই ধাপে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের রেলপথ উদ্বোধন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত আরও ৮৭ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হবে ২০২৪ সালের জুনে। তারপরই পুরো চালু হবে ১৬৯ কিলোমিটারের ঢাকা থেকে যশোরের সরাসরি যোগাযোগ।
এক নজরে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প:
১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ করার প্রথম উদ্যোগ নেন। যদিও এ সময় পদ্মা সেতুতে শুধু সড়ক পথ থাকার কথা ছিল। এরপর দেশি অর্থায়নে ১৯৯৯ সালের মে মাসে পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু হয়।
আর জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার কাজ ২০০৩ সালের মে মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৫ সালে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ২০০৭ সালের ২০ অগাস্ট একনেক সভায় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়।
২০০৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারির একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় দ্বিগুণ করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় উন্নীত করে প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সংশোধনীতেই প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুতে রেল যুক্ত করা হয়।
২০১১ সালের প্রথম দিকে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম তৈরি করা হয়। সেই কনসোর্টিয়ামে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পটিতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।
২০১২ সালের ৩০ জুন দুর্নীতির অভিযোগে ঋণ বাতিল করে দেয় বিশ্ব ব্যাংক। ২০১২ সালের জুলাই মাসে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনা প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
একই সাথে পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল চালু নিয়েও পদক্ষেপ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেক সভায় পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনে ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটির জন্য প্রস্তাবিত ৩১৩ কোটি ডলারের চীনা ঋণের চূড়ান্ত চুক্তি করতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। চীন প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা জানায়। ২০১৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৭ কোটি ডলার ঋণচুক্তি করে।
২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় একনেক সভায় প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত জমি অধিগ্রহণে জমির দাম তিনগুণ হয়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে যায়। ওই সংশোধনীতে মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
করোনাভাইরাস মহামারিতে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু রেলওয়েকে সময়মতো সাইট বুঝিয়ে না দেওয়ায় পিছিয়ে যায় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন। এ সময়ে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয় প্রায় ৮৩ শতাংশ। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথে রেল চলাচল উদ্বোধন করা হচ্ছে। ভাঙা থেকে যশোর অংশের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জুনে।