আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফরের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম যাবেন পটুয়াখালী জেলায়। মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, উপকূলে বাঁধ নির্মাণের কাজ বিভিন্ন সরকারের সময় হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে কোনো গাফিলতি বা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাঁধ ভাঙবে না এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলমও প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে দেশের ১৯ জেলায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল। প্রায় ৭ ঘণ্টাব্যাপী প্রচণ্ড শক্তির ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত এবং তছনছ হয়ে গেছে বহু জনপদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, গাছপালা, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, দোকানপাট, বাতিল হয়েছে বিমানের বহু ফ্লাইট। এ পর্যন্ত রাজধানীসহ সাত জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ১৬ জনের। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১৯ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১০৭টি উপজেলার সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ। পৌনে ৩ কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছেদ পড়েছে। ১৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফেনী, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। রিমালের আঘাতে মারা যাওয়াদের মধ্যে রয়েছে ঢাকায় ৪, ভোলায় ৩, বরিশালে ৩, পটুয়াখালীতে ২, খুলনা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ১২ জন।রিমালের প্রভাবে রাজধানীতে বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে আলাদা ঘটনায় নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকোর ২ কোটি ৭০ লাখ ৩১ হাজার ৯৩১ জন গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কেবল পল্লী বিদ্যুতেরই ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন গ্রাহক আছেন বলে সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের বার্তায় জানানো হয়েছে।এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। এ ছাড়া ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ জন গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি বিদ্যুৎ অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।